December 6, 2025, 7:36 pm

শাকিব জানত, চেষ্টা করলেও লাভ হবে না : তামান্না

Reporter Name

তখন বয়স চৌদ্দ কি পনেরো, মাত্র কয়েক মাসের জন্য সুইডেন থেকে দেশে এসেছিলেন। ছুটি কাটিয়ে ফিরে যাওয়ার চার দিন আগে একটি বিজ্ঞাপন এজেন্সি থেকে ফোন পান। নিজের এবং পরিবারের আগ্রহে সেই বিজ্ঞাপনটি করেন। এটি প্রচারে আসতেই প্রশংসায় ভাসতে থাকেন।

বিজ্ঞাপনটি সে সময় এত সাড়া ফেলে যে মুহূর্তেই প্রস্তাব আসতে থাকে সিনেমার। রাজি হয়ে নাম লিখিয়েও ফেলেন। প্রথম সিনেমাতেই করেন বাজিমাত, গড়েন রেকর্ডও। তিনি আর কেউ নন, এক সময়ের নন্দিত ও মিষ্টি হাসির চিত্রনায়িকা তামান্না হুদা।
 

পুরো নাম তামান্না হাসিন হুদা হলেও দর্শকমহলে তিনি তামান্না নামেই জনপ্রিয়। বেড়াতে এসে মুহূর্তের মধ্যেই বনে গেলেন নায়িকা। নব্বইয়ের মাঝামাঝিতে তার আগমন ঘটে অনেকটা নক্ষত্রের মতো। ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা সিনেমায় অভিনয় করেন।

মাত্র ৫ বছরের ক্যারিয়ারেই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় সিনেমা ছেড়ে দিয়ে ফিরে যান সুইডেনে। এখনো সেখানেই রয়েছেন। 

অভিনেত্রীর বাইরেও তামান্না একজন ডেন্টিস্ট। পাশাপাশি সুইডেনের নৃত্যশিল্পী অ্যাসোসিয়েশনের ড্যান্স লিডার হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন তিনি।

সিনেমা ছেড়ে বিদেশবিভূইয়ে এখন কাটছে সময়, সিনেমার পুরনো দিনগুলো নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।

বরাবরই স্পষ্টবাদী এ নায়িকা কথা বলেন সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়েও। তার কথা শুনেছেন ইমরুল নূর। 

No photo description available.

কেমন কাটছে জীবন, এমন প্রশ্নে কালের কণ্ঠকে তামান্না হুদা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, স্বামী-সংসার-সন্তান নিয়ে ভালো আছি। আমি তো এখানে একটি নাচের প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছি। ভালোই যাচ্ছে। এ ছাড়া পরিবারকে সময় দিচ্ছি, এভাবেই কেটে যাচ্ছে বলা যায়।’

যেহেতু অনেক বছর ধরেই সুইডেনে, অভিনয়কে তো নিশ্চয় মিস করেন! সেখানকার ইন্ডাস্ট্রিতে তো চাইলেই অভিনয় করতে পারতেন। কথার রেশ ধরে তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে কিছু পেয়েছিলাম কিন্তু আমি আগ্রহ পাইনি। কারণ তারা যেভাবে কাজ করে, যে ধরনের কাজ করে সেগুলো আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি আমার দেশে যে সুবর্ণ সময়টা পার করে এসেছি, এখনো যে তার জন্য অনেক মানুষের ভালোবাসা পাই সেটাতেই আমি তৃপ্ত। ছেলে-মেয়েরা বড় হচ্ছে, মাঝেমধ্যে তাদের সঙ্গে সেই সময়গুলো নিয়ে গল্প করি।’

No photo description available.

তাদের মা বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য তারকা ছিলেন এক সময়, এই বিষয়ে ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে কী প্রতিক্রিয়া পান? তামান্না বললেন, ‘আমার মেয়ের বয়স ১৮ আর ছেলের ১৫ বছর। তারা মাঝেমধ্যে ইউটিউবে যখন আমার সিনেমা দেখে তখন প্রশ্ন করে ‘মা, এটা কী, ওটা কী’। ওরা তো পুরোপুরি বাংলা বলতে পারে না, একটু একটু পারে। প্রশংসা করে। তা ছাড়া ওদের স্কুলের শিক্ষকরা আমার বিষয়ে জানেন। তারা আমাকে সে সম্মানটুকুও দেন।’

চাকরি, সংসার সামলে সময়ে পেলে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে নিজ দেশের সিনেমা দেখেন বলেও জানালেন তামান্না। সর্বশেষ দেখেছেন শাকিব খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’।

বললেন, ‘এখানে বাংলাদেশি সিনেমা মাঝেমধ্যে রিলিজ হয়। সুযোগ পেলে আমি দেখতে যাই। দেশের সিনেমা বলে কথা। শাকিবের সিনেমা দেখেছিলাম লাস্ট। অনেক পরিবর্তন হয়েছে ওর।’

May be an image of 1 person

যে বছর তামান্নার সিনেমাতে অভিষেক হয় তার পরের বছরই অভিষেক ঘটে শাকিব খানের। দুজনে একসঙ্গে সিনেমাতে জুটি বেঁধে অভিনয়ও করেছেন। তাদের অভিনীত সিনেমাগুলো হলো ‘কঠিন শাস্তি’, ‘স্বার্থপর সমাজ’, ‘অশান্তির আগুন’, ‘মুখোশধারী’ ইত্যাদি।

শাকিব খানের সঙ্গে সে সময় কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, এখন যোগাযোগ হয় কি না, এমন প্রশ্নে তামান্না হুদা বলেন, ‘আমার যে বছর সিনেমা রিলিজ হয়, ওই বছরই নাকি পরের বছর যেন শাকিবের প্রথম সিনেমা রিলিজ হয়। ওর সঙ্গে দুই-তিনটা ছবি করেছিলাম মনে হয়। আমি তো তখন একদম নতুন ছিলাম, শুটিংয়ে সেভাবে আলাদা করে কারো সঙ্গে কথা বলতাম না, মিশতাম না। কাজ করে সোজা বাসায় চলে আসতাম। শাকিবও তখন নতুন ছিল। তবে ওর মধ্যে সব সময় কাজের প্রতি সৎ থাকতে দেখেছি, শুধু কাজে ডুবে থাকত। সারাক্ষণ সিনেমা নিয়ে ভাবত। শুটিংয়ে কাজের বাইরে সেভাবে আমাদের তেমন কোনো কথা হতো না। আর শাকিবও সেভাবে চেষ্টা করত না। কারণ ও জানে, চেষ্টা করলেও লাভ হবে না। কারণ ওই সময় আমি কারো সঙ্গে মিশতামই না।’

তিনি আরো বলেন, ‘এরপর তো আমি চলেই এলাম। শাকিবের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। শাকিবও যোগাযোগ করেনি। তবে সম্প্রতি ওর সিনেমা দেখে বুঝতে পেরেছি ও নিজেকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। তা ছাড়া মাঝেমধ্যে সোশ্যালেও অনেক কিছু দেখি। বুঝতে পেরেছি, ও এখন দেশের অনেক বড় তারকা। এটা দেখে আমার ভালোই লেগেছে। কারণ, আজকে শাকিব যা হয়েছে, সেটা ওর নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমের কারণেই সম্ভব হয়েছে। ও এটা ডিজার্ভ করে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা